সুনামগঞ্জের হাওরবেষ্টিত কামারগাঁও, নারকিলা, ছিকাডুপি, বল্লভপুর, উজানগাঁও ও জাহানপুরের লোকেরা বংশ পরম্পরায় চোর হিসেবে পরিচিত। ১৯৭১। দিরাই-শাল্লার হিন্দুরা ধনসম্পদ ফেলে শরণার্থী হয়েছিলেন। এই সুযোগে ফেলে যাওয়া সম্পদ চুরি করে নিজেদের ভাগ্য বদল করেন নি চোরেরা, পাহারা দিয়েছেন হিন্দুদের ঘরবাড়ি। বর্ষার উত্তাল হাওরে নৌকা চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নৌকার মাঝির কাজ করেছেন। চোরের গাঁওয়ের তরুণদের বেশিরভাগই ছিলেন দাসপার্টির সাহসী বাইছাল। এই সময়ে চোরের গাঁওগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি হয়ে ওঠেছিল।মুক্তিমাঝিরা স্মৃতিচারণে এখনও গ্রামগুলোকে বলেন : মুক্তিঘাঁটি। সম্মুখযুদ্ধে শহিদ হয়েছেন গ্রামের মাঝিরা, আহত হয়েছেন অনেকে। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ায় তিনটি গ্রামে গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে এবং দু’টি গ্রাম থেকে অন্তত ৩০ জন নারীকে ধরে নিয়ে ক্যাম্পে নির্যাতন করা হয়েছে। স্বাধীনতার পরপরই বীরাঙ্গনাদের বিয়ে করে ঘরে তুলেন মুক্তিমাঝিরা, জন্ম নেয় যুদ্ধশিশু। সেই যুদ্ধ শিশুকে কাবিনে ‘পিতা অজ্ঞাত লিখে’ বিয়ে করেন চোরের গাঁওয়েরই কোনও এক তরুণ।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে চাপাপড়া এই আখ্যান এতদিন সবার অজানা ছিলো। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর ‘১৯৭১: চোরের গাঁওয়ের অশ্রুত আখ্যান’ রচিত হলো। স্বীকৃতির জন্য এখন লড়াই করছেন যুদ্ধে শহিদ, যোদ্ধাহত ও বীরাঙ্গনাদের পরিবারের লোকজন। তাঁরা কি শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের স্বীকৃতি পাবেন?
২০১৮ সালের একুশে বইমেলায় গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে নাগরী প্রকাশন। ৩০৮ নং স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ। দাম ২০০ টাকা।
(শামস শামীম এর ফেসবুক থেকে)