উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে পা ফেলেছে তখন এই উপমহাদেশ। মধ্যযুগ থেকে আড়মোড়া ভেঙে ধীরে ধীরে আধুনিক যুগের দিকে যাত্রা শুরু হয়েছে তার। সমাজের নারীর অবস্থান তখন নেই বললেই চলে। যেটা আছে, সেটা দাসত্বের শৃঙ্খলে বন্দি। এই দাসত্বমুলক সমাজে স্বাভাবিকভাবেই নারী শিক্ষার অবস্থান নড়বড়ে। প্রচলিত কোনো আইনকানুন নারীশিক্ষার পক্ষে তো ছিলোই না, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারীশিক্ষা ছিলো সমাজ এবং রাষ্ট্রের চোখে দণ্ডনীয় এবং অমার্জনীয় এক অপরাধ। রেনেসাঁর পদধ্বনি শোনা গেলেও সেখানে নারীর কোনো ভূমিকা ছিলো না। তার আলাদা কোনো অস্তিত্ব আছে, সেটাকে স্বীকার করা তো অনেক দূরের কথা, সংখ্যাগরিষ্ঠের মাঝে এই বিষয়ে বোধটাই ছিলো না। পুরুষের সেবাদাসী হয়ে সংসারধর্ম পালন করবে নারী, তার সন্তানের মা হবে, তাদের মানুষ করবে, পুরনো এই বৃত্তবন্দি চিন্তাতেই আবদ্ধ ছিলো পুরুষের মানসিকতা।
এ’রকম এক পশ্চাৎপদ সময়ে জন্ম হয়েছিলো তাঁর। সেটা ১৮৫৮ সাল। মহারাষ্ট্রের এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মেছিলেন তিনি। তাঁরা তিন ভাইবোন ছিলেন। তাঁর বড় হচ্ছে ভাই, বোন হচ্ছে ছোট। রমাবাঈয়ের জীবন ছিলো বিস্ময়ে পরিপূর্ণ এক জীবন। সুনীতি দেবনাথ তাঁর প্রবন্ধ ‘এক অনন্যা - পণ্ডিত রমাবাঈ’ প্রবন্ধে লিখেছেন,
“রমা বাঈয়ের সম্পূর্ণ জীবন যেনো এক বিস্ময়কর কাহিনী। ভারতীয় অন্যান্য নারীর মত বাঁধা পথে তাঁর জীবন চলেনি, বেহিসেবি ঠিকানাহীন ঝড়োপথে এই নারী জীবনের প্রতিটি বাঁকেই ভিন্নতর মাত্রা সংযোজন করে চলেছিলেন। তাঁর যে ঝড়ো জীবন তা রূপকথা বা কল্পকথার কাহিনীকেও হার মানায়। তাঁর সারাটা জীবন কাহিনী যেনো কোনো অন্যলোকের অন্য আরেক বিধাতা অভূতপূর্ব এক আলেখ্যের মতো নির্মাণ করেছেন। অবিরাম অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম আর সামগ্রিকভাবে ভারতীয় নারী সমাজের বন্ধন মুক্তির লড়াই আর ক্ষমতায়ন— এই যেনো ছিলো তাঁর জীবনের লক্ষ্য। এমনটা দেখা যায় না। পদে পদে প্রিয় স্বজনদের মৃত্যু একে একে নিয়েছে কেড়ে, দুর্ভিক্ষপীড়িত, ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ, ক্ষতবিক্ষত এক জীবন, তবু অটল পদবিক্ষেপে অনন্যা হয়ে চলেছেন তিনি।”
তাঁর বাবা ছিলেন সংস্কৃত ভাষার পণ্ডিত। মেয়েকে তিনি নিজেই সংস্কৃত শিখিয়েছিলেন। মেয়েকে সংস্কৃত শেখানোটা কাল হয়েছিলো তাঁর জন্য। এই অপরাধে সমজাচ্যুত করা হয় তাঁকে। বাধ্য হয়ে লোকালয়ের বাইরে গিয়ে বাস করতে লাগলেন তিনি। স্থায়ী বসবাসের পরিবর্তে স্থান থেকে স্থানান্তরে বসবাসের জন্য ঘুরে বেড়াতে থাকলেন তিনি পরিবার নিয়ে। জীবিকার উপায় হলো হিন্দু ধর্মশাস্ত্র, পুরাণাদি নানা জায়গায় মন্দিরে, মেলায়, জন সমাগম স্থানে পাঠ করে শোনানো। এর ফাঁকে ফাঁকে চলতে থাকলো সন্তানদের পাঠ দেবার প্রক্রিয়া। অসম্ভব মেধাবী রমাবাঈ আত্মস্থ করতে থাকলেন সব শাস্ত্রজ্ঞান। একই সাথে চলতে থাকলো ভাষা শিক্ষা। সংস্কৃত ভাষা ছাড়াও তিনি মারাঠি, কানাড়ি, হিন্দুস্তানি এবং বাংলা ভাষাতেও দক্ষ হয়ে উঠলেন তিনি। পরবর্তীতে তিনি ইংরেজি, হিব্রু, টুলু ও গ্রীক ভাষাও শিখে ফেলেন।
নানা জায়গায় ক্রমাগত কষ্টকর ভ্রমণ, টাকা-পয়সার অভাব, তাঁর বাবা-মায়ের জীবনীশক্তিকে শুষে নেয়। ১৮৭৭ সালের দুর্ভিক্ষে তাঁরা দুজনেই মারা যান। সাথে নিয়ে যান ছোট কন্যাকেও। পরিবারের মধ্যে বেঁচে থাকেন শুধুমাত্র রমাবাঈ আর তাঁর বড়ো ভাই।
জীবিকার জন্য বাবার দেখানো পথ ধরেন তাঁরা। তিনি এবং তাঁর ভাই সারা ভারতবর্ষ জুড়ে সংস্কৃত সাহিত্যের উপর লেকচার দিয়ে বেড়াতে থাকেন। অত্যন্ত সুবক্তা ছিলেন তিনি। রমাবাঈয়ের খ্যাতি কোলকাতা পর্যন্তও পৌঁছে যায়। কোলকাতার পণ্ডিতমহল তাঁকে আমন্ত্রণ জানান এখানে বক্তৃতা দেবার জন্য। তাঁর পাণ্ডিত্যে অভিভূত হয়ে কোলকাতার সুধী সমাজ তাঁকে ‘সরস্বতী’ উপাধি দিয়ে ভূষিত করেন। সে সময়ে সরস্বতী ছিল সর্বোচ্চ উপাধি। তখন থেকেই তাকে ‘পণ্ডিত রমাবাঈ’ বলে সম্বোধন করা হয়।
কোলকাতাতেই নবজন্ম হয় পণ্ডিত রমাবাঈয়ের। এখান থেকেই নারী স্বাধীনতার প্রথম উচ্চারণ করলেন তিনি। পতিত অবস্থা থেকে নারীর উত্তরণের প্রথম পথ তিনি খুঁজেছিলেন শাস্ত্রের মাঝে। সেখানে কোনো পথ খুঁজে না পেয়ে হতাশ হলেন তিনি। বাংলায় তখন রেনেসাঁর সূত্রপাত হয়েছে। নতুন এবং পুরাতনের মধ্যে দ্বন্দ্ব তখন প্রকট। এই অস্থির সময়ে তিনি কাছে পেলেন বাংলার রেনেসাঁর প্রথম সারিতে অবস্থান করা কেশবচন্দ্রকে। কেশবচন্দ্রের সংস্পর্শে রমাবাঈ হয়ে উঠতে থাকলেন আরো সংস্কার মুক্ত।
কোলকাতা থাকা অবস্থায় তিনি প্রেমে পড়েনে এক বাঙালি যুবকের। এই যুবকের নাম বিপিন বিহারী। তিনি একজন আইনজীবী। তাঁরা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। গোল বাঁধে জাত-পাতে। রমাবাঈ ব্রাহ্মণ, অন্যদিকে বিপিন বিহারী কায়স্থ। শাস্ত্রমতে এই বিয়ে সম্ভব নয়। প্রচলিত প্রথা ভেঙে সিভিল ম্যারেজ করেন তাঁরা। সালটা ১৮৮০।
পণ্ডিত রমা বাঈ (ছবিঃ ইন্টারনেট)
মাত্র দুই বছরের দাম্পত্য সম্পর্ক তাঁর। মনোরমা নামের একটা মেয়ের জন্ম হয় সেই দাম্পত্যে। ১৮৮২ সালে বিপিন বিহারী মারা যান। রমাবাই এর বয়স তখন মাত্র তেইশ। স্বামী মারা যাবার পরে কোলকাতা ছেড়ে পুনেতে চলে যান তিনি। সেখানে নারীদের শিক্ষা বিস্তারের জন্য আর্য মহিলা সমাজ নামের একটা সংস্থা গঠন করেন।
১৮৮২ সালে লর্ড রিপন শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়। সেই কমিশনে নারী শিক্ষা বিস্তারের জন্য কিছু সুপারিশ দেন রমাবাঈ। রামাবাঈ এই কমিশনের কাছে, শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, মহিলা স্কুল ইন্সপেক্টর নিয়োগ করা এবং নারীদের চিকিৎসার জন্য মহিলা ডাক্তার প্রয়োজন, তাই মেডিকেল কলেজে মেয়েদের ভর্তি হবার সুযোগ দেওয়ার সুপারিশ পেশ করেন। এই সুপারিশ সেই সময় বিপুল আলোড়ন সৃষ্টি করেন। যার প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে লেডী ডাফরিন মেয়েদের মেডিকেল শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দেয়ার আন্দোলন করেন। এই সুপারিশসমুহ দেবার সময়ে একটা কথা তিনি বলেছিলেন যেটা এখনও স্মরণযোগ্য। তিনি বলেছিলেন,
“এই দেশের একশো জনের মধ্যে নিরানব্বই জন শিক্ষিত পুরুষই নারী শিক্ষা এবং নারীর যথাযথ অবস্থানের বিরোধী। তারা যদি কোনো নারীর তিল পরিমাণ ত্রুটি আবিষ্কার করতে পারে, সেই তিলকে তারা পর্বতে পরিণত করে ছাড়ে। সেই সাথে তারা সেই নারীর চরিত্র হননও করে ছাড়ে।”
পুনেতে নারীমুক্তি এবং নারী শিক্ষা নিয়ে একটা বক্তৃতা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন রমাবাঈ। সেই বক্তব্য তিনি শেষ করতে পারেননি। একদল পুরুষের প্রবল হট্টগোলের মাঝে তাঁকে বক্তৃতা থামিয়ে দিতে হয়। মজার বিষয় হচ্ছে, এই স্থানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও উপস্থিত ছিলেন। তাঁর বয়স তখন আটাশ বছর। তিনি অবশ্য সভাতে কোনো হট্টগোল করেননি। বরং এই লোকদের কাজকে নীচ শ্রেণীর কাজ বলে পরে তাঁর লেখায় নিন্দাই করেছিলেন।
রমাবাঈ এর বক্তৃতা শোনার পরিপ্রেক্ষিতে রবীন্দ্রনাথ তাঁর একটা প্রতিক্রিয়া লেখেন। সেই লেখার শেষ অংশে তিনি ওইসব হট্টগোলকারী লোকদের আচরণের সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু, তাঁর মূল প্রবন্ধে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, সেটা সেই হট্টগোলকারী লোকদের চেয়ে উন্নত কিছু ছিলো না। তাঁর লেখাটা অনেক বড়ো। এর প্রতি পদে ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর পুরুষাধিপত্য মনোভাবের প্রকাশ। তিনি বিশ্বাস করতেন নারী-পুরুষ সমান নয়। প্রাকৃতিকভাবে পুরুষ উৎকৃষ্ট আর নারী হচ্ছে নিকৃষ্ট। নারী-পুরুষের অসাম্য তাই তাঁর কাছে ন্যায়সঙ্গত। এর বিরুদ্ধে কথা বলাটা প্রকৃতিবিরুদ্ধ।
সেই লেখার কিছু চুম্বক অংশ নিয়ে আলোচনা করা যাক। তিনি লিখেছেন,
“সকল বিষয়েই প্রকৃতিতে একটা Law of Compensation অর্থাৎ ক্ষতিপূরণের নিয়ম আছে। শারীরিক বিষয়ে আমরা যেমন বলে শ্রেষ্ঠ, মেয়েরা তেমনই রূপে শ্রেষ্ঠ; অন্তঃকরণের বিষয়ে আমরা যেমন বুদ্ধিতে শ্রেষ্ঠ, মেয়েরা তেমনই হৃদয়ে শ্রেষ্ঠ; তাই স্ত্রী পুরুষ দুই জাতি পরস্পর পরস্পরকে অবলম্বন করতে পারছে। স্ত্রীলোকের বুদ্ধি পুরুষের চেয়ে অপেক্ষাকৃত অল্প ব'লে অবশ্য এ কথা কেউ বলবে না যে, তবে তাদের লেখাপড়া শেখানো বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ; যেমন, স্নেহ দয়া প্রভৃতি সম্বন্ধে পুরুষের সহৃদয়তা মেয়েদের চেয়ে অল্প বলে এ কথা কেউ বলতে পারে না যে, তবে পুরুষদের হৃদয়বৃত্তি চর্চা করা অকর্তব্য। অতএব স্ত্রীশিক্ষা অত্যাবশ্যক এটা প্রমাণ করবার সময় স্ত্রীলোকের বুদ্ধি পুরুষের ঠিক সমান এ কথা গায়ের জোরে তোলবার কোনো দরকার নেই।”
মেয়েদের বুদ্ধিশুদ্ধি প্রাকৃতিকভাবেই কম, এটা রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন। রমাবাঈ এর বক্তৃতা যে সব পাণ্ডারা পণ্ড করে দিয়েছিলো, তাদের চেয়ে তিনি কিছুটা উন্নত। ফলে, স্ত্রী শিক্ষা অত্যাবশ্যক এই বিষয়ে দ্বিমত তিনি করেননি, কিন্তু সেই শিক্ষা অত্যাবশ্যক করার আগে ছেলে এবং মেয়েদের বুদ্ধিগত কোনো পার্থক্য নেই, এটাকে মেনে নিতে নারাজ ছিলেন তিনি।
পুরুষ অধীনতার বিরুদ্ধে কথা বলাটা তাঁর কাছে নাকী সুরে অভিযোগের বাইরে আর কিছু নয়। এর পিছনে যে বঞ্চনা কিংবা বৈষম্য থাকতে পারে, নিজস্ব প্রাপ্য অধিকার আদায়ের দাবী থাকতে, সেটাকে তিনি মানতে চাননি। এই দাবী নিয়ে এগোলে নারী-পুরুষের মধ্যে বিচ্ছেদ হবে, এবং সেই বিচ্ছেদে মূলত নারীদেরই ক্ষতি হবে, সেটাই দৃঢ়স্বরে বলেছেন তিনি। অসাম্য দূর করে নারী-পুরুষের স্বাস্থ্যকর সুসম্পর্কের প্রতি তাঁর কোনো আগ্রহ নেই। এক অংশ নির্বিচারে অন্য অংশের অধীনতা মেনে নেবে বিনা বাক্য ব্যয়ে, আর সেই অধীনতার কারণে যে শান্তি তৈরি হবে, সেই শান্তিই বেশি কাম্য এই রোম্যান্টিক কবির মনে। তিনি লিখেছেন,
“আজকাল একদল মেয়ে ক্রমাগত নাকী সুরে বলছে, আমরা পুরুষের অধীন, আমরা পুরুষের আশ্রয়ে আছি, আমাদের অবস্থা অতি শোচনীয়। তাতে করে কেবল এই হচ্ছে যে, স্ত্রীপুরুষের সম্বন্ধবন্ধন হীনতা প্রাপ্ত হচ্ছে; অথচ সে-বন্ধন ছেদন করবার কোনো উপায় নেই। যারা অগত্যা অধীনতা স্বীকার করে আছে তারা নিজেকে দাসী মনে করছে; সুতরাং তারা আপনার কর্তব্য কাজ প্রসন্ন মনে এবং সম্পূর্ণভাবে করতে পারছে না। দিনরাত খিটিমিটি বাধছে, নানা সূত্রে পরস্পর পরস্পরকে লঙ্ঘন করবার চেষ্টা করছে। এরকম অস্বাভাবিক অবস্থা যদি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়, তা হলে স্ত্রীপুরুষের মধ্যে অনেকটা বিচ্ছেদ হবে; কিন্তু তাতে স্ত্রীলোকের অবস্থার উন্নতি হওয়া দূরে থাক, তাদের সম্পূর্ণ ক্ষতি হবে।”
রমাবাঈয়ের বক্তৃতা প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের প্রতিক্রিয়া দিয়েই বাকি পুরুষদের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, সে বিষয়ে সহজেই অনুমান করা সম্ভব। অনুমান করা সম্ভব কী ধরনের বৈরী পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে রমাবাঈকে যেতে হয়েছে নারীর ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলন করার জন্য।
১৮৮৩ সালে একটা স্কলারশিপ পেয়ে লন্ডনে ডাক্তারি পড়তে গিয়েছিলেন রমাবাঈ। কিন্তু, কানে কম শোনার অসুস্থতা ছিল বলে সেই পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি তিনি। তার বদলে আমেরিকাতে চলে যান তিনি। আমেরিকা থেকে ফিরে এসে ১৮৮৯ সালে বম্বেতে তিনি কিশোরী বিধবাদের জন্য স্কুল ও হোস্টেল ‘সারদা সদন’ চালু করেন। এই সদনকে পরে তিনি বম্বে থেকে পু্নেয় স্থানান্তরিত করেন। এসময় তিনি আশ্রিতাদের অর্থকরী জীবিকার জন্য জমি কিনে ‘মুক্তি সদন ফার্ম’ও গড়ে তোলেন।
রমাবাঈয়ের সংগ্রাম শুধুমাত্র নারী শিক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো না, রাজনৈতিক অঙ্গনেও তাঁর ছিলো দৃঢ় পদচারণা। তিনি ভারতীয় শ্রমিকদের দুর্দশার বিরুদ্ধে জনমত গঠনের জন্য জনসভা করেন। পরে ভাইসরয় ও তার স্ত্রীকে এই বিষয়ের উপর আলোকপাত করে লিখিত প্রস্তাব পাঠান। ১৯০৪ সালে ভারত মহিলা পরিষদের প্রথম সভায় তিনি সভানেত্রীত্ব করেন। ১৯০৮ সালে সুরাটে, ১৯১২ সালে বোম্বাইতে এবং ১৯২০ সালে সোলাপুরে ভারত মহিলা পরিষদের অধিবেশনগুলোতেও সভানেত্রীত্ব করেন। ভারতের নারীর ভোটাধিকারের আন্দোলনের সাথেও তিনি জড়িত ছিলেন। দীর্ঘ ছয় বছর ধরে নারীদের ভোটাধিকারের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবার পর ১৯২৩ সালে বোম্বাইতে নারীদের ভোটাধিকার অর্জিত হয়।
নারীর অধিকার আদায়ে পাশ্চাত্য নারীবাদীদের ভূমিকার কথা আমরা জানি। তাঁদের সংগ্রামের কথা আমরা স্মরণ করি শ্রদ্ধার সাথে। কিন্তু, নারী আন্দোলনের সেই প্রাথমিক পর্যায়ে আমাদের মতো পিছিয়ে থাকা এক সমাজে একজন নারী মেয়েদের শিক্ষা, তাদের অধিকার, তাদের সম্মান এবং মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রায় এককভাবে যে সংগ্রাম করে গিয়েছেন, সেটাকে মনে রাখার প্রয়োজন বোধ করি নাই আমরা। অথচ অনায়াসেই ইনি হতে পারতেন আমাদের এখনকার সময়ের মেয়েদের জন্য রোল মডেল। এখন থেকে দেড়শো বছর আগে শিরদাঁড়াকে শক্ত করে, গ্রীবাটাকে উঁচিয়ে যে সাহস নিয়ে তিনি লড়াই করেছেন পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে, সেই সাহসটা সংক্রমিত হতে পারতো এখনকার মেয়েদের মধ্যে।