সিমোন দা বোভোয়ার তাঁর ‘দ্য সেকেন্ড সেক্স’ বইতে নারী কী, এই প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, কেউ নারী হয়ে জন্ম নেয় না, ক্রমশ নারী হয়ে ওঠে। এই বইটা প্রকাশ হয়েছিলো ১৯৪৯ সালে। বোভোয়ার বিশ্বাস করতেন, নারী হচ্ছে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক শক্তিসমূহেরর সৃষ্টি। এ কারণে তিনি নারীকে দ্বিতীয় লিঙ্গ বলেছেন। প্রথম লিঙ্গ হচ্ছে পুরুষ।
বোভোয়ার যখন এই কথাগুলো লিখেছিলেন, সেই সময়টা এখন আর নেই। পাল্টে গেছে অনেক কিছুই। বৈজ্ঞানিক গবেষণাসমূহে দেখা যাচ্ছে, প্রাকৃতিকভাবেই নারী এবং পুরুষ মৌলিকভাবে আলাদা। সমাজ তাদেরকে নারী বা পুরুষে পরিণত করে না। লক্ষ লক্ষ বছর নারী এবং পুরুষ ভিন্ন ধরনের কাজ করেছে। যেগুলোর জন্য ভিন্ন ধরনের দক্ষতার প্রয়োজন হয়েছে। সময় গড়ানোর সাথে সাথে নারী এবং পুরুষের মস্তিষ্কে পার্থক্য তৈরি হয়ে গিয়েছে বিবর্তনের ফলশ্রুতিতে। সামাজিক শক্তিসমূহ নারীকে নারী করছে না, বরং একজন নারী জন্মই নিচ্ছে আসলে নারী হয়ে।
কৃষি ব্যবস্থা আবিষ্কারের আগে, শিকারি-সংগ্রাহক
কৃষি বিপ্লবের পরে অর্থনীতিতে একক আধিপত্য এসে যায় পুরুষের হাতে। জমি পরিষ্কার করা, চাষ করা, সেখানে শস্য জন্মানো, সবকিছুই করে পুরুষ। অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যবসা-বাণিজ্যও
শিল্প বিপ্লব এই অবস্থা থেকে মুক্তির সুযোগ এনে দেয় নারীকে। শিল্প বিপ্লবের ফলে যে অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক শক্তি তৈরি হয়, সেটা নারীকে আবার নিয়ে আসে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে। কৃষি বিপ্লবের আগে যে অর্থনৈতিক মুক্তি তাদের ছিলো, সেটাই আবার ফিরে আসে এই নতুন সমাজ ব্যবস্থা। যতো দিন যাচ্ছে, শুধু পাশ্চাত্যে নয়, প্রাচ্য এবং অন্যান্য অনুন্নত অংশেও নারী এগিয়ে আসছে অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে।
বিবর্তনের দীর্ঘ পথচলায় নারী এবং পুরুষ যেহেতু ভিন্ন ধরনের কাজ করেছে এবং সেই কাজ করতে ভিন্ন ধরনের দক্ষতার প্রয়োজন হয়েছে, সে কারণে তাদের মস্তিষ্কেও পার্থক্য তৈরি হয়েছে। ভাষাগতভাবে নারী পুরুষের তুলনায় দক্ষ। অঙ্গ-ভঙ্গি, মুখের ভাবসহ নানা ধরনের অব্যক্ত চিহ্নগুলো নারীরা পুরুষের তুলনায় অনেক ভালোভাবে পড়তে পারে। নারীর আবেগগত স্পর্শকাতরতা, অন্যের প্রতি মায়ামমতা, স্বাদ, স্পর্শ, গন্ধ এবং শ্রবণশক্তি পুরুষের চেয়ে বেশি। একই সাথে অনেক বেশি বিষয় নিয়ে চিন্তা করা বা কাজ করার দক্ষতাও নারীর বেশি। যে কোনো সমস্যার সার্বিক দিক দেখতে পায় তারা, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাতেও পুরুষের চেয়ে তাদের দক্ষতা বেশি। নেটওয়ার্কিং, সহযোগিতা এবং দরকষাকষিতেও পারদর্শী তারা।
এর বিপরীতে পুরুষেরও ভিন্ন ধরনের দক্ষতা তৈরি হয়েছে। পারিপার্শ্বিক ভৌগলিক অবস্থা, ম্যাপ রিডিং এর পুরুষের দক্ষতা অপরিসীম। জটিল মেকানিক্যাল সমস্যার সমাধান পুরুষ নারীর চেয়ে অনেক ভালোভাবে করতে পারে। কোনো একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা, নিজেদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করাতে পুরুষের কার্যকারিতা নারীর চেয়ে বেশি।
জরায়ুতে ভ্রূণ যখন জন্ম নেয়, তখন সেটা থাকে না পুরুষ, না নারী। ভ্রূণটা যদি ছেলে বাচ্চা হয়, তবে আট সপ্তাহের দিকে ওয়াই ক্রোমোজোম এক্টিভেটেড হয়। এর প্রভাবে সেক্স অর্গান জন্ম নিতে থাকে পুরুষ হরমোন তৈরি হতে থাকে, যেটা পুরুষাঙ্গ তৈরি করে। এটা পরবর্তীতে মস্তিষ্কেও প্রভাব ফেলে। ভ্রূণ পুরুষে পরিণত হয়।
অন্যদিকে ভ্রূণ যদি মেয়ে বাচ্চাতে পরিণত হবার দিকে এগোয়, তবে কোনো পুরুষ হরমোন এর উপরে কাজ করে না। বিনা বাধায় এটি নারীতে পরিণত হয়। এ কারণে বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন, নারীই হচ্ছে মূলত ডিফল্ট প্লান। ওয়াই ক্রোমোজোম এটাকে চেঞ্জ না করলে সব ভ্রূণই নারী হয়েই জন্ম নিতো। হেলেন ফিশার এই তথ্যকে দেখেছেন তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিতে। তাঁর কাছে নারী হচ্ছে প্রাইমারি সেক্স, প্রথম লিঙ্গ। আর সে কারণে সিমোন দা বোভোয়ার যেখানে বই লিখেছেন ‘দ্য সেকেন্ড সেক্স’ শিরোনামে, এর বিপরীতে গিয়ে তিনি তাঁর বইয়ের নাম দিয়েছেন ‘দ্য ফার্স্ট সেক্স’।
হেলেন তাঁর বইতে দেখিয়েছেন বিবর্তন নারীর মস্তিষ্ককে ‘ওয়েব থিংকিং’ বা ‘সিন্থেসিস থিংকিং’ এর জন্য তৈরি করে দিয়েছে। নারীর বিপরীতে পুরুষের চিন্তাভাবনা হচ্ছে সরলরৈখিক বা সিঁড়ির ধাপের মতো। নারী-পুরুষের মস্তিষ্কের এই ভিন্ন ধরনের চিন্তার প্যাটার্ন আজকের যুগে এসে ব্যবসা-বাণিজ্যে
শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যই
হিমবাহ যেমন চলার পথে পালটে দিতে থাকে ভৌগলিক চিত্রকে, আজকের এই যুগে নারীরাও ধীরে ধীরে বিশ্বের সব ব্যবসা-বাণিজ্য,