পৃথু স্যন্যাল

জার্মান প্রবাসী পৃথু স্যন্যাল আপাদ মস্তক একজন স্বাধীনতাকামী ব্যক্তি, ব্লগার। বর্তমানে নারী'র সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

অভিনন্দন সৌদি নারীদের

আমার ছেলেরা বলে, সামথিং মাইট বি হার্ডার, বাট নট ইমপসিবল। লেগে থাকলে যে কোন কিছুতেই সফলতা আসতে বাধ্য। আর এ তো অধিকার। অধিকার আদায়ের সংগ্রামে লেগে ছিলেন বলেই অবশেষে সৌদি নারীরা গাড়ি চালনার অধিকার পেলেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম দি টেলিগ্রাফ সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাতে সৌদি বাদশা সালমান এক রাজ ফরমানের মাধ্যমে আগ্রহী নারীগণকে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

দীর্ঘ সংগ্রামের পর গত সপ্তাহে একটি খেলার স্টেডিয়ামে সৌদি নারীদের প্রথমবার প্রবেশের অনুমোদনের পরই ড্রাইভিং সংক্রান্ত এই অনুমোদন আসে। সৌদী আরবের কট্টর রক্ষণশীল সমাজে এই অনুমোদন নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন। বলা বাহুল্য, সৌদি আরবে নারী জীবন আদতে একটি বন্দি জীবন। সৌদি নারীরা এখনও স্বামী অথবা বাবা অর্থাৎ অভিভাবক ছাড়া এখনও ঘরের বাইরে যেতে পারেন না।

বিশ্বের মধ্যে সৌদি আরবই একমাত্র সর্বশেষ দেশ ছিল যেখানে নারীদের গাড়ি চালনা ছিল নিষিদ্ধ। জানা যায়, গাড়ি চালনার অধিকার চেয়ে সৌদি নারীরা কয়েক দশক আগে থেকেই আন্দোলন করে আসছেন। ১৯৯০ সালের নভেম্বর মাসে গাড়ি চালনার অধিকার চেয়ে ৪৭ জন নারী রিয়াদে গাড়ি চালিয়েই প্রথম প্রতিবাদ করেন।  এর ফলে এদের সকলেই নানান রকম শাস্তি ভোগ করেন। ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত তাদের আন্দোলন প্রায় স্তিমিত হয়ে যায় নানান প্রতিবন্ধকতার কারণে। তখন ওয়াজিহা হুয়াইদার নামের এক সৌদি নারী গ্রেফতার এড়িয়ে সৌদির পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে আবার গাড়ি চালনার মাধ্যমে প্রতিবাদ করেন।

২০১১ সাল থেকে মানাল আল শরিফ এবং নাজলা আল হারিরি গাড়ি চালনার দাবীতে আবার আন্দোলন শুরু করেন। তাদের আন্দোলন আন্তর্জাতিক পর্যায়েও পরিচিত লাভ করে এবং তাঁরা গাড়ি চালনার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে দাবীতে সৌদি রাজতন্ত্রের সাথে আলোচনা চালিয়ে যেতে সমর্থ হন। বিগত দশ বছর সময়ে সৌদি নারীদের মধ্যে গাড়ি চালনার আন্দোলন বেশ জোড়ালো হয়ে উঠলে ২০১৩ সালে আবারও বেশ কজন নারী পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন।

 

আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আজকে সৌদি নারীগণ তাদের গাড়ি চালনার অধিকার অর্জন করেছেন। এই সিদ্ধান্তকে উদযাপন করতে গিয়ে বর্তমান সময়ের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া মানাল আল শরীফ ট্যুইটারে লিখেছেন,

 

“Today the last country on earth to allow women to drive … we did it”.

 

সত্যিই এটি সৌদি সংগ্রামী নারীদের, মানাল আল শরিফদের একটি বিশাল অর্জন। অভিনন্দন সৌদি আরবের সংগ্রামি সেইসব নারীদেরকে।

2528 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।