কেউ যদি কোনো কিছুতে সম্মত না হয়, সে বলে "না"! আমরা তা জানি ও মানি। কিন্তু এই "না" শব্দটা যখন কোনো নারী বলে আমরা ধরে নিতে ভালবাসি যে সে অসম্মত নয়! প্রচলিত প্রবাদ আছে, "নারীর বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না"! অনেকে নারীকে ছলনাময়ী ভাবতে ভালবাসেন। আর প্রায় সবাই নারীকে লাজুকলতা বানাতে চান। এমন ছাঁচে ফেলা যায় যে নারীদের, আমি তাদের বলি লবঙ্গ লতিকা!
"মাইয়ালোকের বুদ্ধি কম"। এটা বাংলাদেশের শতকরা ৯৯ ভাগ পুরুষ বিশ্বাস করেন। ছেলে বলে মাকে, "এ গুলো তোমার মাথায় ঢুকবে না"। বাবা বলে মেয়েকে, "তুই দুনিয়ার কী বুঝিস?" স্বামী বলে বউকে, "এসব বোঝা তোমার কর্ম না!" অফিসে, বাজারে, রাস্তায়, সর্বত্র এক অবস্থা।
জন্ম থেকে কপালে জোটা এই অপমান! অসম্মান! সব নারী মাথা পেতে নেয় না। তারা "না" বলে। কিন্তু তাদের এই "না" শোনার ও বোঝার মানুষ কই? "না" বললে, নারী হয় বেয়াদব, অসভ্য ইত্যাদি! কথা বললে কথা শোনে, "কিছু বোঝে না, আবার মুখে মুখে তর্ক করে!"
এবার "না" এর অন্য প্রসঙ্গে বলি, কোনো নারীকে কোনো পুরুষ প্রেমের প্রস্তাব দিলে সে নারী যদি "না" বলে দেয়, তখনও পুরুষরা এ "না" মানতে পারে না। কারণ নারীর শরীর মন কোনো কিছুর অধিকার জন্মসূত্রে তার নিজের না (বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ অনুসারে)। তাই নারীর "না" বলার অধিকার নাই। নারীর "না" তাই "না" নয় পুরুষের কাছে, সমাজের কাছে।
যে নারী কোনো পুরুষের স্ত্রী, তার অবস্থা আরও শোচনীয়! সে সঙ্গম না করতে চাইলেও তাকে করতে বাধ্য করা হয়। সে যতই "না" বলুক, কে শুনতে যাচ্ছে? ধর্মগ্রন্থগুলোও এ ব্যাপারে খুব উদার। তারা পুরুষদের কোনো আকাক্ষা বিফল হতে দেবে না! তাই নারী পুরুষের কাছে একটা চাবিতে দম দেওয়া পুতুল ভিন্ন কিছু নয়!
সমাজে নারীর এমন মনোমুগ্ধকর(!) অবস্থার সাথে মিশে যাওয়া নারীদের জন্য আমার মনটা কেঁদে যায়। তাদের নাম দিয়েছি আমি লবঙ্গলতিকা। যারা বাদ-বাকী নারী (যারা তাদের মত রঙ ও রুপ নিয়ে ব্যস্ত থাকে না) তাদেরকে পুরুষদের মত করেই গাল দেয়!
অন্যদিকে, সেই সমাজে যেখানে নারীর "না" এর কোনো মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়নি, সেখানে নারীরা ধর্ষণের শিকার হলে আমরা অবাক হই, ধর্ষকের বিচার দাবী করি! কেনো করি? ধর্ষক তো এদেশের এ সমাজের তেলে জলে মানুষ! সে তো জন্ম থেকে জানে, নারীর "না", "না" নয়!
তাই রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে, বাসের ভীড়ে বা জনঅরণ্যে অনেক মেয়ের স্তন খামচে ধরে যে পুরুষ, তাকে আমি কিভাবে ধিক্কার দেই? নারীর শরীর যে নারীর একান্তই নিজের, তার যে "না" বলার অধিকার থাকতে পারে! এটা তো সে কখনও জানতেই পারেনি। এ অশালীনতা তারা পৈত্রিক সূত্রে অধিকার করেছে কেবল মাত্র!
নারীর "না", "না"-ই হয়! এ কথাটা প্রথমত নারীকেই এলান করতে হবে! তারপর না হয় পুরুষকেও অনুধাবন করানো যাবে। লবঙ্গলতিকা হতে গিয়ে আপনার সাথে সাথে বাকী নারীদেরকেও দুর্ভাগা করবেন না। অনুরোধ রইল।