আমাদের সাজিদা ইসলাম পারুল আপা। সমকালের রিপোর্টার। নারী অধিকার নিয়ে বেশি বেশি রিপোর্ট করেন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) কমিটির সাবেক নারী বিষয়ক সম্পাদকও ছিলেন। সমকাল অফিসে গেলেই দেখা হতো, মিষ্টি হাসতেন, খোঁজ-খবর নিতেন কী করছি এখন।
আপা কিছুদিন আগে যুগান্তরের সাংবাদিক রেজাউল করিম প্লাবন নামে একজনকে বিয়ে করেছিলেন। একটা সংসারের স্বপ্ন দেখে আপা যে দীঘিতে নেমেছিলেন, কয়েকদিন যেতে না যেতেই সেটাকে আবিস্কার করলেন চোরাবালি চেহারায়। অল্পদিনের চেনাজানায় কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করেছিলেন প্লাবনকে, বিশ্বাস করে। বিশ্বাস করে তো অনেকেই ঠকে, আপাও ঠকেছেন। এতোটুকু স্বাভাবিক সবার জীবনে। অস্বাভাবিক হয় তখন যখন বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানতে পারি, যৌতুকের জন্য তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছে, আপার ভেতর বাড়তে থাকা ভ্রুণ হত্যা করা হয়েছে, একের পর এক প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে (সচেতনভাবেই 'নিয়েছেন' বলছি না) প্লাবন।
এই বিষয়টা মোটামুটি সবাই জানেন। পত্রিকায়/মিডিয়ায় অনেক লেখালেখি হয়েছে এবং হচ্ছে। পারুল আপা উপরে লেখা অভিযোগ এনে প্লাবনের বিরুদ্ধে গত ১১ মে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মামলা করেছেন। আজকে ২০ দিন পার হয়ে গেলেও পুলিশ প্লাবন সহ অন্যান্য আসামীদের খুঁজে পাচ্ছে না।
না-ই পেতে পারে। প্লাবন সরকারের বড় বড় নেতা/মন্ত্রীদের সাথে ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়ে রেখেছেন। তাকে যে কোন কারণে খুঁজে পাওয়া যাবে না, এটা বোঝার জন্য রকেট সায়েন্স পড়ার প্রয়োজন হয় না। প্লাবন মামলা হবার পরদিনও ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে। আর পুলিশ আসামী ধরার জন্য অভিযানে যায়, গিয়ে পায় না!
অভিযোগ উঠেছে, মামলা হয়েছে। ভদ্রলোক হলে প্লাবনের নিজের দ্বায়িত্ব ছিল পুলিশের কাছে স্যারেন্ডার করে তদন্তে সাহায্য করা। কিন্তু এতোদিন ধরে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন (আসলেই পালিয়ে আছে কিনা জানি না, পুলিশের ভাষ্যমতে আরকি)। প্রশ্ন হলো, কোন অন্যায় করে না থাকলে সে পালিয়ে বেড়াচ্ছে কেন, স্বচ্ছতা চাচ্ছে না কেন!
সমকাল পারুলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, রিপোর্ট করেছে। সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক প্রিয় মুস্তাফিজ শফি ভাই নিজে যুগান্তর সম্পাদকের সাথে কথা বলেছেন। অবস্থান পরিস্কার, পারুলের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) প্লাবনের সদস্য পদ বাতিল করে পারুলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
আমি নিয়মিত ৬টা পত্রিকা পড়ি, সেগুলোর একটা যুগান্তর। ভালো ভালো রিপোর্ট হয়। দেশের প্রভাবশালী পত্রিকা বলে তাদের দ্বায়িত্বশীলতাও বেশি। অথচ এখন পর্যন্ত পারুল আপার বিষয়ে যুগান্তরের পক্ষে/বিপক্ষে কোন অবস্থান আমি জানি না। যুগান্তরের প্রকাশক সালমা ইসলাম এমপি, যিনি কয়েকমাস আগেও সম্পাদকের দ্বায়িত্ব পালন করছিলেন, তিনিও একজন নারী। আমরা চাই, যুগান্তর তাদের অবস্থান পরিস্কার করুক। উনারা উনাদের যুক্তিমতো প্লাবনকে সমর্থন/বর্জন করতে পারেন, তবে সেটা পরিস্কারভাবে জানাতে হবে। প্রতিষ্ঠানটা রহিম/করিম হলে এই দাবি আমি করতাম না। প্রতিষ্ঠানটি যেহেতু যুগান্তর, দেশের নির্ভরযোগ্য পত্রিকা, সেহেতু এই দ্বায়িত্ববোধটুকু উনাদের কাছে আশা করতেই পারি।
আরো শুনছি, সাংবাদিক নেতাদের কেউ কেউ তাকে আশ্রয়/প্রশ্রয় দিচ্ছেন, পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তা তাকে পালিয়ে থাকতে সাহায্য করছে। আমাদের কথা বলতে হচ্ছে প্লাবনকে গ্রেফতার করার জন্য। যে পারুল আপা নারীদের অধিকার আদায়ে কাজ করেছেন, তাঁর অধিকার পেতে আমাদের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া লাগছে, এটাইতো বাংলাদেশের জন্য একটা ট্র্যাজেডি!
এরকম ঘটনা দেশে ঘটছে। ঘটতে থাকবে। এসব ঘটনা কি আমরা মেনে নিতেই থাকবো, প্রতিবাদ করবো না! মানুষ হিসেবে কি আমাদের পারুলের পাশে দাঁড়ানো উচিত না! যে পারুল আপনার/আমার মতো লোকেদের জন্য কথা বলেছে, তাঁর ন্যায় বিচারের জন্য কি এবার আমরা কথা বলবো না! পুলিশ শুরু থেকেই প্লাবন এবং অন্য আসামিদের গ্রেফতারের নামে ইঁদুর-বিড়াল খেলছে, তাঁর প্রতিবাদ করবো না!
আমি পারুলের পাশে আছি। আপনিও আসুন। আমি, আপনি, সবাই মিলে এই তালবাহানার নিন্দা জানাই। আমরা সবাই এক্ষুনি প্লাবনের গ্রেফতার চাই। প্লাবনকে যারা বাঁচানোর চেষ্টা করছে, আশ্রয়/প্রশ্রয় দিচ্ছে তাদের মুখোশও উন্মোচন করে দিতে হবে।
#in_defence_of_Parul
(ছবিসহ আমার এই লেখাটি নিজের প্রোফাইলে দিতে পারেন। কোন কার্টেসির প্রয়োজন নাই। আমরা পারুলের ন্যায়বিচার চাই৷ প্লাবনের গ্রেফতার চাই।)
(লেখাটি শেখ মাহফুজা রশিদ এর ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেয়া হয়েছে।)