শাপলা সপর্যিতা

কবি ও লেখক।

স্মৃতি বিস্মৃতি

মনে মনে ভাবি, একটু ফুরসৎ পেলেই আবার গেঁথে নেব মালাগুলি
গলায় পরতে গিয়ে হঠাৎ ছিঁড়ে টুকটাক্ শব্দে টাইলসের ওপর গড়িয়ে পড়া

লাল নীল পুতিগুলি তাই সযত্নে তুলে রেখেছি।
এখন লালমাই ভোর নেই
রাতভর ঝরে পড়া শিউলির ঘ্রাণ নেই 
তাই পুতির মালাতেই শিউলির ঘ্রাণ পাই
মাথার ওপর নীল আকাশ, মিনিয়েচার এখন
তবু স্মৃতি বিস্তৃত ডানায় বাঁধে সুখ।
মায়ের বিয়ের বাউটি হাতে পরে থাকি 
তার বহুব্যবহৃত সিরামিকের কেটলিতে প্রতিদিন সকালে চা ঢালি
হাতের ছোঁয়া কুশিকাটায় আঁকি স্বপ্ন
নতুন যা নিয়ে গেছে দাদা বৌদি, সে নিক
আমি পুরোনোতে সুখী,
তবু, তোমার কথা আমার মনে পড়েনা কখনো
বালিশে চেপে রুদ্ধশ্বাস রাতের স্তব্ধতা

দম বন্ধ হতে হতে এতটুকু আকুতিতে

প্রার্থনারত নিজের দুটি চোখ আর কখনো মনে পড়ে নি আমার।
তুমি যেদিন বলছিলে, "মেয়েটির ওপর পাশবিক অত্যাচার করেছে তার স্বামী,

তাকেই বিয়ে করতে যাচ্ছ তুমি" আমি সেদিন বিস্মিত হয়ে দেখেছি তোমার মুখ
পাশবিকতা কী, তুমি তা জানতে!
আমি হাসতে হাসতে আমার অজানিতে

"মুসলিম ল" মতে রীতিসিদ্ধ হয়ে যাওয়া ছাড়পত্রটি নিয়ে ঘরে ফিরি, 
জানতাম না ওটাও নকল দিয়ে গেছ
সদার্থে, ডিভোর্স লেটার সম্পর্কে আমার কোনো পূর্ব ধারণা ছিল না
শেষ নাটকেও আমি অন্তত একজন মানুষ খুঁজেছিলাম।
বস্তুত আমি একজন বেশ্যা
যেহেতু আমি নারী হয়ে স্বামীর ঘর ছেড়েছি
বিশেষত আমি একজন বহুভোগ্যা
যেহেতু আমি একজন লেখক
প্রচলিতার্থে আমি মানুষ নই 
যেহেতু আমি একজন নারী
তবু জেনে রাখো, আমি কোনো পুরুষের স্মৃতি নিয়ে সুখে থাকি না
তোমার মুখের মানচিত্র ছিঁড়ে ফেলেছি কবেই আমার ভূগোল থেকে
বিস্মৃতি প্রদোষে একজন মানুষের মুখ আঁকি।

2519 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।